অপেক্ষা



বই পড়ার জন্য গত কয়েকমাস যাবৎ সময় খুঁজছিলাম। আমি যে খুব পড়ুয়া তা কিন্তু না। যখনি চারপাশের ব্যস্ততায় আমি হাঁপিয়ে উঠি, কেবল তখনি আমার বই পড়ার কথা মনে হয়। সে ভাবনা থেকেই সেলফের "বাংলা কালেকশন" থেকে এলোপাথাড় একটা বই টেনে নিলাম। 'অপেক্ষা', হুমায়ুন আহমেদের লেখা বই। আগেও পড়েছি উনার লিখা তাই বিশ্বাস নিয়েই শুরু করে দিলাম। কিন্তু কি হলো জানিনা। বেশিদূর পড়া হলেনা। ইচ্ছে করছিলোনা। মন না চাইলে আবার আমি কোন কিছু টেনে নিয়ে যেতে পারিনা। ব্যাস, রেখে দিলাম। চোখ ফেলে পেছনে তাকাতেই বারান্দায় রাখ ইজি চেয়ারটায় চোখ পড়লো। চেয়ারটা দাদার। যতদিন বেঁচেছিলেন এখানে বসেই চা খেতেন আর সাথে রাজনীতি নিয়ে বিতর্কে জড়াতেন। যদিও আমি পেরে উঠতামনা। 


ভাবতে ভাবতে কখন এসে চেয়ারে বসে পড়েছি মনে নেই। বইটার কথা হঠাৎ আবার মনে পড়লো। নিজেকেই জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা এত নান্দনিক ভাষায় লিখা সাহিত্য ভাল লাগেনি আমার? শুধু কি বইটির নাম 'অপেক্ষা' হওয়াতেই আমি রেখে দিয়েছি? এই 'অপেক্ষার' সাথেতো আমার কোন সমস্যা নেই। ভাবতে ভাবতে কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম। 


মাগরীবের আযান হচ্ছে দূরে কোথাও। সম্বিৎ ফিরে আসে আমার। তবুও চেয়ার ছেড়ে উঠতে মন চাইলোনা। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামলো। আমি যেখানে ছিলাম বসে ঠিক সেখানেই রয়ে গেলাম। আমি কি কারো জন্য অপেক্ষা করছি? কেন করছি? 


মনে হলো কেউ কানের কাছে বলছে, "তোমার অপেক্ষা যখন শুরু হয়, তখন সদ্য পৃথিবীর জন্ম হয়েছে। কোটি বছর ধরে চলা একটা রহস্যময় চক্রের মতো কোন এক অপেক্ষায় তুমি জড়িয়ে গেছো।"


বিড়বিড় করে বললাম, এর শেষ কবে? বছর ধরে বয়ে নিয়ে চলা অপেক্ষার শেষ কি নেই? আর যদি শেষ না থাকে তবেকি এক অপেক্ষার মাঝে আর কোন অপেক্ষা থাকতে পারে?

No comments:

Post a Comment