বাইডেনের বিজয় এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যত



ট্রাম্পের অফিস ছাড়ার খবরে বেশকিছু দেশের পাশাপাশি চীন, ইরান, ফিলিস্তিনি প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে এখন কিছুটা আশার আলো দেখছে। অবশ্য এ আর নতুন কি!! কারণ পৃথিবীর এই শক্তিশালী দেশটির প্রশাসনিক নীতিমালার উপরই তৃতীয় কিংবা চতুর্থ বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভবিষ্যত বহুলাংশে নির্ভর করে থাকে।  


চীনের ক্ষেত্রে, বাইডেন খুব দ্রুত রাজনৈতিক একটা সমাধানে পৌছাতে পারলেও ট্রাম্পের শুরু করা বাণিজ্যযুদ্ধ তিনি সম্ভবত রাতারাতি শেষ করতে পারবেনা। উল্লেখযোগ্য যে, ওবামা প্রশাসনে থাকার সময় বাইডেন ছিলো চীনের সবচেয়ে বড় সমালোচক। উইঘুর সম্প্রদায়ের উপর চীনা সহিংসতার বিষয়েও সম্প্রতি তিনি বেইজিংয়ের কঠোর সমালোচনা করেন৷ 


তবে শুরুর ১০০ দিনে কিংবা তার পুরো টার্মে যে বিষয়টি বাইডেন তথা পুরো বিশ্বের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে তার মধ্যে অন্যতম ইরানের পরমাণু ইস্যু। বাইডেন সরাসরি ঘোষনা না করলেও তার এজেন্ডায় এটা পরিষ্কার যে, যুক্তরাষ্ট্র খুব সতর্কতার সাথেই ইরানের সাথে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবে; অন্তত ২০১৪ সালে ইরানের সাথে করা নিরাপত্তা পরিষদের দেশগুলোর পরমাণু চুক্তিতে তিনি পুনরায় ফিরে যাবেন এটি প্রায় সুনিশ্চিত বলা যায়। তবে এক্ষেত্রে বাইডেন যদি ওবামার মতো "ডুয়াল ট্র্যাক ডিপ্লোম্যাসি" প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় সেক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। কারণ ২০১৮ সালের পর থেকে ট্রাম্পের কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধের পর ইরান টিকে থাকতে শিখে গেছে। তাই ওয়াশিংটন যদি চিন্তা করে পূর্বের মতো হুমকি-ধমকি দিয়ে ইরানকে বশে আনবে, তাহলে ফলস্বরূপ ভবিষ্যতে বাইডেনকে আক্কেল সেলামিও দিতে হতে পারে।


 অন্যদিকে থাকে মধ্যপ্রাচ্য- যাকে কেউ কেউ বাড়িয়ে আমেরিকার হৃৎপিণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে ফেলে৷ সেই মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে দেখা যায়, আমেরিকার নীতিমালা অনেকটা অপরিবর্তনীয়। সেজন্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তোর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার থেকে শুরু করে সর্বশেষ ট্রাম্প প্রশাসনেও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন আসেনি৷ নতুন প্রশাসনের ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় ঘটার কোন সম্বাবনা নেই । তার মানে দাঁড়ায়, ইরান কিংবা ইরাক ইস্যুতে আমেরিকা কূটনৈতিক সমঝোতার দিকে ঝুঁকলেও আদতে ফিলিস্তিনিদের স্বার্থে বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি নীতি থাকছে কিনা তা পুরোপুরি অনিশ্চিত। 


যদিও নতুন প্রশাসন ২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের করা ৭ মুসলিম দেশের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ব্যান তুলে দিয়েছে। এজন্য এখনি বাইডেনকে মুসলিম দেশগুলোর হিতাকাঙ্ক্ষী বলা যাচ্ছেনা। কারণ, ভুলে গেলে চলবেনা বাইডেনের পূর্বসূরী ওবামাও ক্ষমতায় আসার পরে প্রথমেই মুুসলিম দেশ মিসরে সফর করেছিলেন৷ এর প্রায় ২ বছরের যেতে না যেতেই তিনি লিবিয়া ও সিরিয়াতে যুদ্ধ শুরু করেন। সুতরাং একটা জায়গায় সংশয় রয়েই যায়। অধিকন্তু, জেরুজালেম ইস্যুতে ফিলিস্তিনিদের শান্তি রক্ষার্থে ইসরায়েলের বিরাগভাজন হওয়ার মতো সিদ্ধান্ত ওয়াশিংটন কখনোই নিতে চাইবেনা৷ 


তারপরও বাইডেনের কর্মপরিকল্পনার অধিকাংশ ক্ষমতায় আসার আগে তৈরি থাকলেও বেশকিছু ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। যেমনঃ ন্যাটোর সহযোগী রাষ্ট্র তুরষ্ক এবং পুরনো বন্ধু সৌদিআরবের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসন পুনর্মূল্যায়ন করতে পারে। কারণ ক্ষমতায় আসার আগে থেকে কুর্দিদের বিরৃুদ্ধে তুর্কি অভিযান এবং সৌদি প্রশাসনের জামাল খাসোগির হত্যাকান্ডের বিষয়ে তিনি যেভাবে সমালোচনা করেছেন তাতে বুঝা যায় তিনি যেকোনসময় এই দুই দেশের প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেন।


মোটকথা, বাহ্যিক রাজনীতিতে আমেরিকার চিরচেনা লিড ভূমিকা বাইডেন প্রশাসনের ক্ষেত্রে অনেক কঠিন হবে বলা যায়। কারণ বাইডেনই মনে হয় আব্রাহাম লিংকন পরবর্তী একমাত্র প্রেসিডেন্ট যার সামনে যুক্তরাষ্ট্রের শুধু করোনা মোকাবিলা ছাড়াও করোনা পরবর্তী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো সমাধান এবং বহির্বিশ্বে আমেরিকার সদ্য হারিয়ে যাওয়া মর্যাদা ফেরানোর চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এখন শুধু দেখার বিষয়, তিনি কত সুচারুভাবে তার দায়িত্বগুলো বাস্তবায়ন করতে পারেন।

No comments:

Post a Comment