বাংলা বিভক্তি ও গুজবের রাজনীতি


 ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ত্রিপুরা বাংলাদেশের সাথেই ছিলো। ৭১ র পর ভারত আমাদের সহযোগিতা করার বিনিময়ে এ রাজ্যগুলো আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়। 

আসলেই কি তাই??

১৯০৩ সালে লর্ডকার্জনের বঙ্গভঙ্গ করার সময় বাংলা আসাম, উরিষ্যা নিয়ে একটি আলাদা প্রদেশ করার বিবেচনা করা হয়। এর পেছনের কারণ ছিলো তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ও আসামের মানুষের নিম্ন মানের জীবনযাত্রা। উপরন্তু, পূর্ববঙ্গের অধিকাংশ মানুষ ছিলো বাংলাভাষী মুসলমান। এতে এ অঞ্চলের প্রতি কলকাতার তৎকালীন হিন্দু ধনিক সম্প্রদায়ের সুনজর তেমনটা ছিলোনা। অর্থনীতি কিংবা রাজনীতি যেকোন কিছুতেই পূর্বাঞ্চলের জনগনকে পশ্চিমবঙ্গের বিশেষ করে কলকাতার উপর নির্ভর করতে হতো। কিন্তু কলকাতার জমিদার সম্প্রদায় ও জাত হিন্দুদের সুনজরে না থাকায় এ অঞ্চলে উন্নয়নের কথা কেউ আমলেই নেয়নি৷ এজন্যই পূর্বাঞ্চলের মানুষের অনেক দিনের দাবি ছিলো তারা আলাদা একটি প্রদেশ গঠন করবে যেন পশ্চিমাঞ্চলের উপর তাদের আর নির্ভর করতে না হয়।

অনেক বিচার-বিবেচনার পর ১৯০৫ সালে যখন বঙ্গভঙ্গ হয় তখন দেখা গেলো সত্যি সত্যি পূর্ববঙ্গ ও আসামের মানুষের জীবনযাত্রায় অভাবনীয় পরিবর্তন লক্ষ করা গেলো। পশ্চিমবঙ্গের অনেক বাঙ্গালীর শিল্পকারখানা এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান  পূর্ববঙ্গে স্থানান্তরিত হয়। আজকাল শতবছরের পুরনো যত স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তার প্রায় সব বঙ্গভঙ্গের কারণে হয়। তবে এ বঙ্গভঙ্গের ফলাফল পূর্ববঙ্গের জন্য সুফল বয়ে আনলেও এর বিপরীতে কলকাতার মর্যাদা খানিকটা হলেও ম্লান হয়ে পড়ে৷ তাতে অনেক হিন্দু জমিদার, চাকরিজীবী, আইনজীবী এর বিরুদ্ধে সরাসরি কথা বলতে শুরু করে। এমনকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোর বিরোধিতা করে। এজন্যে ব্রিটিশ সরকার ১৯১১ সালে বঙ্গবঙ্গ রধ করে। 

অর্থাৎ এতে স্পষ্ট প্রমাণিত হয়, আসামের সাথে পূর্ববঙ্গ তথা বর্তমান বাংলাদেশর রাজনৈতিক সম্পর্ক টিকেছিলো মাত্র ৬ বছর৷ তাহলে কি মাত্র ৬ বছরের রাজনৈতিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে দাবি করা যায় যে আসাম, ত্রিপুরা বাংলাদেশের অংশ ছিলো??

তারপরও একটা সুযোগ ছিলো ১৯৪৭ র শুরুতে। যখন মাউন্টব্যাটেন জিন্নাহকে সোজাসাপ্টা জানিয়ে দেন যে, যদি মুসলিমলীগ ভারত বিভক্তি চায় তাহলে হয় বাংলাকেও ভাঙ্গতে হবে ; নয়তো পাঞ্জাব প্রদেশকে ভাঙ্গতে হবে। তখন প্রত্যাশিতভাবেই জিন্নাহ অখন্ড পাঞ্জাব প্রদেশের স্বার্থে বাংলাকে ভাগ করার কথায় সম্মতি দেয়।

আমি বলছিনা ভারত সরকারের প্রতি মাউন্টব্যাটেন পক্ষপাতিত্ব ছিলেনা। কিন্তু,জিন্নাহ-নেহেরু এ প্রস্তাবে সম্মতি জানানোর পরেই ভারত-পাকিস্তানের সাথে দুই বাংলাও পৃথক হয়ে যায়। 

তাহলে আসাম, ত্রিপুরাকে ৭১ এ ভারত ছিনিয়ে নিয়েছে কিংবা সহযোগিতার প্রতিদানে বাংলাদেশ ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে এ অভিযোগের যৌক্তিকতা কতটুকু??

No comments:

Post a Comment