পদ্মা সেতু ও বাংলাদেশ

 


বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মাসেতু নিয়ে বাংলাদেশে ১.২ বিলিয়ন ডলার ঋন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় তখন সবাই মোটামুটিভাবে ধারণা করেছিলো যে, এত বড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন তো শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার !!  

কিন্তু আশ্চার্যজনক হলেও সত্যি, প্রতিশ্রুতির কিছুদিন পরই বিশ্বব্যাংক কানাডার কোম্পানি এসএনসি-লাভালিনের সাথে বাংলাদেশের তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান "সাকো" র বিরুদ্ধে যোগসাজশের অভিযোগ আনে। এবং দূর্নীতির প্রমাণ পেলে প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি দেয়।

বাংলাদেশ সরকার তৎক্ষনাৎ এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও বিশ্বব্যাংকের চাপে দুদককে তদন্তের নির্দেশ দেয়। কিন্তু দুদকের প্রতিবেদনে কোন দূর্নীতি প্রমাণ পাওয়া যায়নি জেনেও বিশ্বব্যাংক এই প্রতিবেদন আমলে না নিয়ে তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্তেই অটল থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। দেশেও গুঞ্জন উঠে দুদক সরকারের চাপে পড়ে সত্য প্রকাশ করছেনা। ফলশ্রুতিতে তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেন। 

২০১০ থেকে ২০১১ র মাঝামাঝিতে দীর্ঘ ১ বছর ৫ মাস ধরে চলা এ নাটকের শেষ হয় ২০১২ সালে এসে- যখন প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সাথে প্রতিশ্রুতি দেন," পদ্মা সেতু অবশ্যই হবে, এবং বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নেই হবে।" শুধু তাই নয়, এতকিছু ঘটার পর সরকার এতটাই সংকল্পবদ্ধ ছিলো যে, বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন না করার নেটিশ পাঠানোর আগেই বাংলাদেশ তাদের জানিয়ে দেয় যে তাদের অর্থায়নে বাংলাদেশ চাচ্ছেনা।

সেসময় এতকিছুর ঘটে যাওয়ার পরও নিজস্ব অর্থায়নে এত বড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন বাংলাদেশে সরকারের জন্য ছিলো যেমন চ্যালেন্জিং তেমনি দুঃসাহসিক। তারপরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবিচল মানসিকতায় ৩.৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ৬.১৫ কিলোমিটারের স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। 

সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সরিয়ে রেখে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত তা করে দেখাতে পেরেছে। যদিও বিশ্বব্যাংকের ওই অভিযোগ ২০১৭ সালের দিকে এসে কানাডার আদালত এ মামলার রায়ে অভিযুক্তদের নির্দোষ ঘোষণা করে বলেন যে, অভিযোগটি ছিলো মিথ্যা, ইচ্ছা প্রণোদিত এবং সাজানো। 

শুধু পদ্মসেতু কিংবা সমুদ্রসীমা বিজয়ই নয়, স্বাধীনতার অর্জনের পর গত ৪৯ বছরে বাংলাদেশ যা যা কিছু অর্জন করেছে তার প্রত্যেকটি ছিলো আমাদের জন্য একেকটা খন্ড খন্ড বিজয়। হয়তো একাত্তরে যা হারিয়েছি তার ক্ষতিপূরণীয় নয়। কিন্তু বাংলাদেশ যতবার মাথা উঁচু করবে ঠিক ততবার আমাদের মনে হবে, "আমরা পেরেছি, বাংলাদেশ পেরেছে, ১৬ কোটি মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।"

No comments:

Post a Comment